ঢাকা ১০:১৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
জুলাই আন্দোলনে আহত-নিহতদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করতে হবে: নজরুল ইসলাম: শেষমেশ পণ্যজট কমাতে বন্দরে নিলামে উঠছে ৪৭৫ পণ্যবাহী কনটেইনার  : সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ। ২৭ রানে অলআউট ওয়েস্ট ইন্ডিজ, স্টার্কের ৬ উইকেট, স্কট ৩ উইকেট এবং হ্যাটট্রিক। ৭ দফা দাবিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের মানববন্ধন: বজ্রপাত রোধে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে তালের চারা রোপণ। সবাইকে ‘জুলাই বিপ্লব’ চেতনাকে অন্তরে ধারণ করতে হবে: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক। এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শূন্যপদ ১০০৮২২টি আবেদন জমা পড়েছে ৫৭৮৪০। চলতি মাসের মধ্যে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব নামে ওয়েবসাইট তৈরি করার নির্দেশনা। এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় ‘এসডিজি ব্র্যান্ড চ্যাম্পিয়ন অ্যাওয়ার্ডস-২০২৫ পেয়েছে প্রাণ-আরএফএল।

সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ।

মোঃ রেহান উদ্দীন
  • আপডেট সময় : ০৮:৪৪:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫ ১০০ বার পড়া হয়েছে

সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দেন।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড, মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সম্পর্কে এবং কোন স্কুলগুলো ভালো করছে সে ব্যাপারে মূল্যায়ন জানতে চান।

বৈঠকে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনেক অর্থব্যয় হয়েছে। কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য-শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সেটি সাধন হয়নি। আমরা মূল্যায়ন করে স্কুলগুলোকে র‌্যাংকিং করছি। যেসব স্কুলের বাচ্চারা পিছিয়ে আছে তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছি।’

তিনি জানান, মূল্যায়নে দেখা গেছে যেসব স্কুলের মান ভালো সেখানে প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা ও তার সঙ্গে অন্য সহকর্মীদের সম্পর্ক-ব্যবহার বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। দেশের প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন তিনি।

বৈঠকে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের পাশাপাশি নতুন নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কীভাবে যোগ্যদের নিয়ে আসা যায় সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কয়েকটা ক্যাটাগরি করে দিতে হবে। যারা বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন, অভিজ্ঞ তারা প্রাধান্য পাবেন। এর পাশাপাশি তরুণদেরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুযোগ দিতে হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে সমন্বয় করে অতিদ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশ দেন তিনি। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রেও নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় এক উপজেলায় নিয়োগ পেয়ে পরে অন্য উপজেলায়, শহরের কাছে কোনো স্কুলে শিক্ষকরা বদলির জন্য চেষ্টা করেন, তারা সুপারিশ-তদবির নিয়ে বিভিন্ন মহলে ঘোরেন। এক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা ও প্রক্রিয়া থাকতে হবে। কেবল ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি বদলি হতে পারবেন।’

স্কুলগুলোতে মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, স্কুলের অবকাঠামো নারীবান্ধব কি না এসব বিষয়েও জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় কমিটিতে অন্তত একজন নারী স্থপতি রাখতে হবে যাতে নারীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ হয়। পরিকল্পনায়, চিন্তায়, বাস্তবায়নে মেয়েদের বিষয় আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হবে, সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

এছাড়া দেশের সব প্রাথমিক স্কুলকে ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরির বিষয়েও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

দেশে শিক্ষার ভিত্তি বলে বিবেচিত প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট বেড়েই চলছে। প্রধান শিক্ষকের ৬৫ হাজারের বেশি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩২ হাজারের বেশি পদই শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। একই সঙ্গে সাড়ে ২৪ হাজারের মতো সহকারী শিক্ষকের পদও ফাঁকা।

শিক্ষকের এই সংকটের প্রভাব পড়ছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষাকার্যক্রমেও। বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে।

মামলা, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা, নিয়োগ পরীক্ষায় দেরি, পদোন্নতিতে ধীর গতির কারণে এ সংকট দীর্ঘ হচ্ছে। এমনিতেই ঠিকমতো পড়াশোনার অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে ওপরের শ্রেণিতে ওঠে। এর মধ্যে বিদ্যমান শিক্ষক সংকট এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
superadmin
ট্যাগস :

সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ।

আপডেট সময় : ০৮:৪৪:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫

সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ।

সোমবার (১৪ জুলাই) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়োগের নির্দেশ দেন।

বৈঠকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড, মুহাম্মদ ইউনূস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান সম্পর্কে এবং কোন স্কুলগুলো ভালো করছে সে ব্যাপারে মূল্যায়ন জানতে চান।

বৈঠকে উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অনেক অর্থব্যয় হয়েছে। কিন্তু মূল যে উদ্দেশ্য-শিক্ষার মান বৃদ্ধি, সেটি সাধন হয়নি। আমরা মূল্যায়ন করে স্কুলগুলোকে র‌্যাংকিং করছি। যেসব স্কুলের বাচ্চারা পিছিয়ে আছে তাদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি নিচ্ছি।’

তিনি জানান, মূল্যায়নে দেখা গেছে যেসব স্কুলের মান ভালো সেখানে প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতা ও তার সঙ্গে অন্য সহকর্মীদের সম্পর্ক-ব্যবহার বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। দেশের প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ বর্তমানে শূন্য রয়েছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান বলেও প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন তিনি।

বৈঠকে প্রধান শিক্ষক পদে পদায়নের পাশাপাশি নতুন নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘স্কুলগুলোতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কীভাবে যোগ্যদের নিয়ে আসা যায় সে বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে। কয়েকটা ক্যাটাগরি করে দিতে হবে। যারা বহু বছর ধরে শিক্ষকতা করে আসছেন, অভিজ্ঞ তারা প্রাধান্য পাবেন। এর পাশাপাশি তরুণদেরও প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুযোগ দিতে হবে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।’

সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে সমন্বয় করে অতিদ্রুত বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্নের নির্দেশ দেন তিনি। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রেও নীতিমালায় পরিবর্তন আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘অনেক সময় এক উপজেলায় নিয়োগ পেয়ে পরে অন্য উপজেলায়, শহরের কাছে কোনো স্কুলে শিক্ষকরা বদলির জন্য চেষ্টা করেন, তারা সুপারিশ-তদবির নিয়ে বিভিন্ন মহলে ঘোরেন। এক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা ও প্রক্রিয়া থাকতে হবে। কেবল ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই তিনি বদলি হতে পারবেন।’

স্কুলগুলোতে মেয়েদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা, স্কুলের অবকাঠামো নারীবান্ধব কি না এসব বিষয়েও জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

তিনি বলেন, ‘স্কুলের ভবন নির্মাণের সময় কমিটিতে অন্তত একজন নারী স্থপতি রাখতে হবে যাতে নারীবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ হয়। পরিকল্পনায়, চিন্তায়, বাস্তবায়নে মেয়েদের বিষয় আলাদা করে গুরুত্ব দিতে হবে, সব ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

এছাড়া দেশের সব প্রাথমিক স্কুলকে ধারাবাহিকভাবে ইন্টারনেট সংযোগ ও মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ তৈরির বিষয়েও জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

দেশে শিক্ষার ভিত্তি বলে বিবেচিত প্রাথমিকে শিক্ষক সংকট বেড়েই চলছে। প্রধান শিক্ষকের ৬৫ হাজারের বেশি অনুমোদিত পদের মধ্যে ৩২ হাজারের বেশি পদই শূন্য। অর্থাৎ প্রায় ৫২ শতাংশ বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। একই সঙ্গে সাড়ে ২৪ হাজারের মতো সহকারী শিক্ষকের পদও ফাঁকা।

শিক্ষকের এই সংকটের প্রভাব পড়ছে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও শিক্ষাকার্যক্রমেও। বিশেষ করে প্রান্তিক অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়ছে।

মামলা, শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশাসনিক জটিলতা, নিয়োগ পরীক্ষায় দেরি, পদোন্নতিতে ধীর গতির কারণে এ সংকট দীর্ঘ হচ্ছে। এমনিতেই ঠিকমতো পড়াশোনার অভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতি নিয়ে ওপরের শ্রেণিতে ওঠে। এর মধ্যে বিদ্যমান শিক্ষক সংকট এ সমস্যাকে আরও প্রকট করে তুলছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।