গ্রামের শিক্ষার্থীদের মোবাইল গেম আসক্তি ও তার পরিণতি

- আপডেট সময় : ০৬:০০:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫ ১১১ বার পড়া হয়েছে
গ্রামের শিক্ষার্থীদের মোবাইল গেমে আসক্তি, শিক্ষা হারাচ্ছে গতি:
বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট ও স্মার্টফোন এখন শুধু শহরেই নয়, গ্রামের ঘরেও পৌঁছে গেছে। একদিকে এটি যেমন যোগাযোগ, শিক্ষা ও তথ্যপ্রাপ্তির দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেছে, অন্যদিকে কিছু নেতিবাচক দিকও সামনে এনে দিয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি হলো— মোবাইল গেমে শিক্ষার্থীদের আসক্তি, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রবণতা দিনদিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
#অবসর নয়, সময়ের অপচয়
এক সময় গ্রামের শিশু-কিশোররা খেলাধুলা, গল্পগুজব, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও প্রাকৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠত। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ছোট ছোট শিক্ষার্থীর হাতেও স্মার্টফোন। সকাল-সন্ধ্যা চোখ মোবাইলের পর্দায়—ফ্রি ফায়ার, পাবজি, ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস কিংবা নানা ধরনের ‘#অ্যাডিকটিভ’ গেমে ডুবে থাকে তারা। পড়াশোনা, নৈতিকতা, ঘুম, পরিবার, এমনকি নিজের শরীরের যত্ন নেওয়ার কথা ভুলে যাচ্ছে তারা।
#পড়াশোনা হচ্ছে উপেক্ষিত
অনেক অভিভাবক এখন অভিযোগ করছেন, সন্তানদের পড়ার টেবিল ফাঁকা থাকে, কিন্তু মোবাইল সারাক্ষণ ব্যস্ত। অনলাইনে ক্লাসের নাম করে গেম খেলে সময় কাটানো, পড়ার সময় মনোযোগ না দেওয়া, পরীক্ষায় ফলাফল খারাপ হওয়া—সবকিছুই এক ভয়াবহ চক্রে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে গ্রামের শিক্ষার্থীরা যেখানে পড়াশোনার সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম, সেখানে এই আসক্তি ভবিষ্যতের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন-মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব
গেমের মধ্যকার সহিংসতা, প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব, অতিরিক্ত উত্তেজনা শিক্ষার্থীদের আচরণে প্রভাব ফেলছে। তারা ধৈর্য হারাচ্ছে, পরিবার ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ কমছে, এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে।
#সমাধানের পথ কী?
অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে—শিশুর হাতে মোবাইল তুলে দেওয়ার আগে ভাবতে হবে এর পরিণতি।
#বিদ্যালয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা প্রয়োজন—শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিকল্প বিনোদন সৃষ্টি করতে হবে—খেলার মাঠ, পাঠাগার, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দিলে শিক্ষার্থীরা গেম থেকে দূরে সরে আসবে।
#নিয়ন্ত্রিত #ইন্টারনেট ব্যবহার ও #স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করতে হবে।
সহমর্মিতার সাথে পরামর্শমূলক আলোচনা করে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে হবে—মোবাইল গেম জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না।
#গ্রামের শিক্ষার্থীরা এক সময় ছিল প্রকৃতির ছায়ায় বেড়ে ওঠা সম্ভাবনাময় প্রজন্ম। কিন্তু এখন তারা মোবাইলের পর্দায় বন্দি। এই প্রবণতা বন্ধ না হলে আগামী প্রজন্মের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে। সময় এসেছে—সচেতনতা, দিকনির্দেশনা ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাদেরকে গেমের আসক্তি থেকে মুক্ত করে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবে।
**************************
এমরানা বেগম, সহকারী প্রধান শিক্ষক
আমরাইদ ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়
কাপাসিয়া, গাজীপুর।