শিরোনাম:
ভূয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় গরুর মৃত্যু, ১০ হাজার টাকা জরিমানা।

মোঃ আছমত আলী
- আপডেট সময় : ০৫:৩২:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫ ৭৮ বার পড়া হয়েছে
মোঃ আছমত আলী, নাসিরনগর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
ভূয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় গরুর মৃত্যু , ১০ হাজার টাকা জরিমানা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওর বেষ্টিত উপজেলা নাসিরনগর। হওরের গ্রামাঞ্চলে পশুচিকিৎসা সেবার সংকট ক্রমেই উদ্বেগজনক রূপ নিচ্ছে। অর্ধ- শিক্ষিত প্রশিক্ষণ বিহীন পল্লী চিকিৎসকদের ভুল চিকিৎসার ফলে গরুর মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ভুল চিকিৎসায় গরুর মৃত্যুতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ফার্মেসী সিলগালা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন।
৬ আগষ্ট ( বুধবার ) সন্ধ্যয় ৭ টায় কুন্ডার তুল্লা পাড়ার পারভীন আক্তার উপজলা প্রণিসম্পদ কর্মকর্তার বরাবরে অভিযোগ করেন, পল্লী চিকিৎসক মোঃ রতন মিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগে প্রকাশ পল্লী চিকিৎসক রতন কে দিয়ে তার গরুর চিকিৎসা করান । সে চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা- নিরিক্ষা ছাড়াই ওষুধ প্রয়োগ করলে গরুটি কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যায় বলে অভিযোগ পারভীন বেগমের । তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন ও প্রণিসম্পদ কর্মকর্তা U L O মোহাম্মদ সামিউল বাছির ,আইন শৃংখলা বাহিনী কে নিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে মোঃ রতন মিয়াকে না পেয়ে তার ফার্মেসীটি সিলগালা করেছেন ,এবং
অভিযানে অলক চন্দ্র দাস নামে এক ব্যক্তিকে সনদবিহীনভাবে এলাকায় পশু চিকিৎসা সহ তার ফার্মেসীতে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহীনা নাছরিন ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ULO) মোঃ সামিউল বাছির, এ সময় আরও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপজেলার বাসিন্দা মোঃ মিনহাজ মিয়া জানান গ্রামাঞ্চলে পেশাদার ভেটেরিনারি চিকিৎসক বা পশু চিকিৎসা সেবার অভাব দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে। এই সুযোগে অনেকেই অল্প কিছু প্রশিক্ষণ, কিংবা কোনো রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই পল্লী চিকিৎসক’ হিসেবে কাজ করছেন। এদের মধ্যে কেউ কেউ ওষুধ বিক্রয় প্রতিষ্ঠানের কর্মী, কেউ আবার স্থানীয় ‘হেকিম’ বা পূর্ব অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন ।তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে অনেক গরু মারা যাচ্ছে।
স্থানীয় এক কৃষক মোঃ কিবরিয়া জানান, “আমার একটি দুই লক্ষ টাকার দুধেল গাভী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। স্থানীয় একজন ‘পল্লী চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করায়,সে গাভী টি দেখে ইনজেকশন দেন, তার পরই গরুটি মারা যায়। পরে শুনি, ইনজেকশনটি ভুলভাবে দেওয়া হয়েছিল এবং রোগ নির্ণয়ও ঠিক ছিল না।”
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করে ও পাওয়া যায় নি।
প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা নয়া দিগন্তের প্রতিনিধিকে জানান সম্প্রতি দেখা গেছে, ভুল চিকিৎসার ফলে গবাদি পশুর মধ্যে, বিশেষ করে গরুর, ছাগলের নানা জটিলতা দেখা দিচ্ছে। কখনও ভুল ডোজ, কিংবা মেয়াদউত্তীর্ণ ঔষধসহ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ, কখনও সংক্রমণের ভুল ব্যাখ্যায় মেয়াদ উত্তীর্ণ ইনজেকশন, কিংবা অপচিকিৎসার ফলে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে এলাকায় গরুর মৃত্যু বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
তিনি আরো বলেন,পশুসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তার অভাব , অননুমোদিত ও অপ্রশিক্ষিত ব্যক্তি দ্বারা পশু চিকিৎসা করানো আইনত দণ্ডনীয়। তবে জনবল সংকট এবং নজরদারির অভাবে এই সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে শুধু খামারিদের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে না, বরং গো-সম্পদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও বাড়ছে। এ অপ চিকিৎসার রোধ করতে না দেশের পশুসম্পদ উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করবে।
এ সময় একটি ভেটেরিনারি ফার্মেসীতে মোবাইল কোর্ট অভিযানে সনদবিহীন চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণ না থাকায়, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় অলক চন্দ্র দাস কে ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং আর এলাকায় চিকিৎসা না করার শর্তে মুছলেখা নিয়ে মাফ করে দেন। এছাড়াও দুইটি ফার্মেসীতে বিপুল পরিমাণ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট দোকানগুলোকেও সিলগালা করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা নাছরিন বলেন উপজেলায় ভুল চিকিৎসায় আর কোন প্রাণি যেন প্রাণ না হারায়, সে জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যবহার রোধ এবং ভেটেরিনারি ফার্মেসীগুলোতে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বন্ধসহ অবৈধ চিকিৎসা প্রতিরোধ কার্যক্রম তদারকির লক্ষ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।