ঢাকা ০৯:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম:
একদিকে চলছে প্রেমিকের বিয়ে অন্যদিকে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর মরদেহ উদ্ধার। অসুস্থ আমিনুলের সাথে হাসপাতালে দেখা করলেন কর্মচারী নেতৃবৃন্দ। ব্রাহ্মনবাড়িয়ার নাসিরনগরে বিনা মূল্যে চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত।  মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা ! কৈ মাছের তেলে কৈ ভাজুন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা জাতীয়করণ’ করুন। নাসিরনগরে আইন শৃংখলার  সভা অনুষ্ঠিত।  প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের দাবিতে রূপগঞ্জে বিক্ষোভ ॥ মানববন্ধন ‘স্বাস্থ্য সচেতনতায় নারীর জীবনে সুস্থতার নতুন দিশা’ স্লোগানে ৬০০ ছাত্রীকে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ। জুলাই শহীদ স্মৃতি শিক্ষাবৃত্তি চালু করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, আবেদন শুরু। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন, তফসিল ঘোষণা। নাসিরনগর পূজা উদযাপন ফ্রন্টের পরিচিত  সভা অনুষ্ঠিত।

একদিকে চলছে প্রেমিকের বিয়ে অন্যদিকে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর মরদেহ উদ্ধার।

নড়াইল প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় : ০৬:৫৫:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫ ৬০ বার পড়া হয়েছে

একদিকে চলছে প্রেমিকের বিয়ে অন্যদিকে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর মরদেহ উদ্ধার।

প্রেমিকের বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ (২০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের পাশাপাশি বাম হতের একটি আঙ্গুলের নখও ওঠানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। নিহত সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল (মধ্য পাড়া) গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।  নিহতের পরিবারের দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শুক্রবার সকাল ১১টার পর নড়াইলের কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন অটোরিকশা চালক সুজন। পরে তাকে উদ্ধার করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতিকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে লোহাগড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহটি হেফাজতে নেয়।

জানা যায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরশুনা গ্রামের শিমুল সরদারের মেয়ে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীর সাথীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মাসুমের। পারিবারিক ভাবে তাদের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তাদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে। এর মাঝে বুধবার (৩০ জুলাই) মাসুম এলাকা ছেড়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে বড় বোনের বাসায় গিয়ে ঊঠেন।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার পর প্রেমিকার বিয়ের খবরে ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সকাল ৯টার দিকে চাচাতো ভাই তরিকুল তার মুঠোফোনে কল করে জানতে পারেন মাসুমের অবস্থান লোহাগড়ায়। তরিকুল তাকে অনুরোধ করেন বাড়িতে ফেরার জন্য। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি মাসুমের।

মাসুমের রহস্যজনক মৃত্যুতে এলাকায় চঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ প্রশ্ন ওঠছে সবার মনে। তুলারামপুর হাইওয়ে থানা ও লোহাগড়া থানার কয়েক দফায় ঠেলাঠেলিতে সুরতহাল শেষে রাত পৌনে ১২টায় সদর হাসপাতাল মর্গে পৌঁছায় নিহতের মরদেহ।

অটোরিকশা চালক সুজন বলেন, গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ার দিকে যাচ্ছিলাম। মধুমতি সেতুতে উঠতেই দেখি পাশের বড় লেনে উপুড় হয়ে একজন পড়ে আছে। আমরা কাছে গিয়ে দেখি বেঁচে আছে, আমার গাড়িতে থাকা যাত্রীদের সাহায্য নিয়ে তাকে উঠাই। পরে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।

ঘটনাস্থলে দুর্ঘটনার কোন আলামত দেখতে পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে সুজন বলেন, সেখানে দুর্ঘটনার কোনো ছিটেফোঁটা আমরা দেখিনি। তার শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত তাকে কেউ হয়তো গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।

নিহত মাসুমের বোন জামাই হাছিবুল ইসলাম বলেন, মাসুমের সঙ্গে পাশের গ্রামের সাথীর সম্পর্কের বিষয়টা আমরা পারিবারিক ভাবেই জানতাম। সাথীর পরিবার যেহেতু মেনে নিচ্ছে না, আমরা তাকে সবাই বুঝাইছি। আগে সে জাহাজে চাকরি করতো, তবে দীর্ঘদিন সে আর জাহাজে যায়নি। পারিবারিক সমস্যার কথা বোঝানোতে সে আবার জাহাজে চাকরিতে যেতে রাজি হয়। বুধবার আমার ঢাকার বাসায় যায়, পরদিন আমাদের বলে একসঙ্গে শুক্রবার ঘুরতে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সে হুট করে বলে সকালে বাড়ি যাবো। তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, সাথীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে কারণে। তাকে আমরা আবার বোঝাই। কিন্তু সে শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে রওনা করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে কল করে জানাই।

নিহত মাসুমের ছোট চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের (মাকড়াইল বিল পাড়া) সাইফুল মোল্যার কাছে সাথীর চাচা লতিফ সরদার সকাল ১০টার দিকে ফোন করে জানান, মাসুম ঝামেলা করতেছে। তার ছেলেপেলেরা মাসুমকে পেলে অবস্থা খারাপ হবে। আমরা খবর পাই মানিকগঞ্জ বাজারের এক পার্লারে সাথীর সঙ্গে মাসুম দেখা করে কথা বলছে। সাথীর চাচা ফোন করে হুমকি দেয়াতে আমরা মাসুমকে খুঁজতে বের হই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো। পরে হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে। আমাদের বিশ্বাস পরিকল্পিত ভাবে সাথীর পরিবার মাসুমকে তাকে হত্যা করছে।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে এবং ঘটনার যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

আপলোডকারীর তথ্য
superadmin
ট্যাগস :

একদিকে চলছে প্রেমিকের বিয়ে অন্যদিকে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর মরদেহ উদ্ধার।

আপডেট সময় : ০৬:৫৫:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

একদিকে চলছে প্রেমিকের বিয়ে অন্যদিকে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর মরদেহ উদ্ধার।

প্রেমিকের বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ (২০) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছেন পুলিশ। নিহতের শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের পাশাপাশি বাম হতের একটি আঙ্গুলের নখও ওঠানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। নিহত সৈয়দ মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল (মধ্য পাড়া) গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে।  নিহতের পরিবারের দাবি এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।

শুক্রবার সকাল ১১টার পর নড়াইলের কাশিয়ানী এলাকার মধুমতি সেতু থেকে অচেতন অবস্থায় মাসুমকে উদ্ধার করেন অটোরিকশা চালক সুজন। পরে তাকে উদ্ধার করে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় নেওয়ার প্রস্তুতিকালে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। পরে লোহাগড়া থানায় খবর দিলে পুলিশ মরদেহটি হেফাজতে নেয়।

জানা যায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া ইউনিয়নের সরশুনা গ্রামের শিমুল সরদারের মেয়ে অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া মাদরাসা শিক্ষার্থীর সাথীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো মাসুমের। পারিবারিক ভাবে তাদের সম্পর্ক মেনে না নেয়ায় তাদের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে। এর মাঝে বুধবার (৩০ জুলাই) মাসুম এলাকা ছেড়ে ঢাকায় কাজের সন্ধানে বড় বোনের বাসায় গিয়ে ঊঠেন।

শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার পর প্রেমিকার বিয়ের খবরে ঢাকার উত্তর বাড্ডা থেকে লোহাগড়ার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সকাল ৯টার দিকে চাচাতো ভাই তরিকুল তার মুঠোফোনে কল করে জানতে পারেন মাসুমের অবস্থান লোহাগড়ায়। তরিকুল তাকে অনুরোধ করেন বাড়িতে ফেরার জন্য। এরপর থেকে পরিবারের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি মাসুমের।

মাসুমের রহস্যজনক মৃত্যুতে এলাকায় চঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু নাকি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, এ প্রশ্ন ওঠছে সবার মনে। তুলারামপুর হাইওয়ে থানা ও লোহাগড়া থানার কয়েক দফায় ঠেলাঠেলিতে সুরতহাল শেষে রাত পৌনে ১২টায় সদর হাসপাতাল মর্গে পৌঁছায় নিহতের মরদেহ।

অটোরিকশা চালক সুজন বলেন, গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া মোড় থেকে যাত্রী নিয়ে নড়াইলের লোহাগড়ার দিকে যাচ্ছিলাম। মধুমতি সেতুতে উঠতেই দেখি পাশের বড় লেনে উপুড় হয়ে একজন পড়ে আছে। আমরা কাছে গিয়ে দেখি বেঁচে আছে, আমার গাড়িতে থাকা যাত্রীদের সাহায্য নিয়ে তাকে উঠাই। পরে লোহাগড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই।

ঘটনাস্থলে দুর্ঘটনার কোন আলামত দেখতে পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে সুজন বলেন, সেখানে দুর্ঘটনার কোনো ছিটেফোঁটা আমরা দেখিনি। তার শরীরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে সম্ভবত তাকে কেউ হয়তো গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।

নিহত মাসুমের বোন জামাই হাছিবুল ইসলাম বলেন, মাসুমের সঙ্গে পাশের গ্রামের সাথীর সম্পর্কের বিষয়টা আমরা পারিবারিক ভাবেই জানতাম। সাথীর পরিবার যেহেতু মেনে নিচ্ছে না, আমরা তাকে সবাই বুঝাইছি। আগে সে জাহাজে চাকরি করতো, তবে দীর্ঘদিন সে আর জাহাজে যায়নি। পারিবারিক সমস্যার কথা বোঝানোতে সে আবার জাহাজে চাকরিতে যেতে রাজি হয়। বুধবার আমার ঢাকার বাসায় যায়, পরদিন আমাদের বলে একসঙ্গে শুক্রবার ঘুরতে যাবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার রাতে সে হুট করে বলে সকালে বাড়ি যাবো। তাকে জিজ্ঞেস করলে বলে, সাথীর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে সে কারণে। তাকে আমরা আবার বোঝাই। কিন্তু সে শুক্রবার ভোরে ঢাকা থেকে রওনা করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে কল করে জানাই।

নিহত মাসুমের ছোট চাচা শরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের গ্রামের (মাকড়াইল বিল পাড়া) সাইফুল মোল্যার কাছে সাথীর চাচা লতিফ সরদার সকাল ১০টার দিকে ফোন করে জানান, মাসুম ঝামেলা করতেছে। তার ছেলেপেলেরা মাসুমকে পেলে অবস্থা খারাপ হবে। আমরা খবর পাই মানিকগঞ্জ বাজারের এক পার্লারে সাথীর সঙ্গে মাসুম দেখা করে কথা বলছে। সাথীর চাচা ফোন করে হুমকি দেয়াতে আমরা মাসুমকে খুঁজতে বের হই, কিন্তু তার ফোন বন্ধ ছিলো। পরে হাসপাতাল থেকে একজন ফোন করে। আমাদের বিশ্বাস পরিকল্পিত ভাবে সাথীর পরিবার মাসুমকে তাকে হত্যা করছে।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, তিনি দুর্ঘটনায় নিহত হন। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে এবং ঘটনার যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।