বাজেট পেশ আজ: কার জন্য কী থাকছে?

- আপডেট সময় : ০৯:১৫:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫ ১৭৯ বার পড়া হয়েছে
আজ (২রা জুন, ২০২৫) জাতীয় সংসদে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করা হবে। এটি হবে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম বাজেট এবং বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট। বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ রেকর্ডকৃত ভাষণের মাধ্যমে বাজেট ঘোষণা করবেন।
প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ঘোষিত বাজেটের (২০২৪-২৫) চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম। এই বাজেটকে ‘বাস্তবভিত্তিক’ বাজেট হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।
বাজেটের মূল লক্ষ্য ও অগ্রাধিকার:
অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, এবারের বাজেটে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং কাঠামোগত রূপান্তরকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা, যোগাযোগ অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, কৃষি এবং মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
আয়ের উৎস ও ব্যয়ের খাত:
* রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআর বহির্ভূত উৎস থেকে ১৯ হাজার কোটি টাকা কর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। করবহির্ভূত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪৬ হাজার কোটি টাকা।
* বাজেট ঘাটতির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরা হচ্ছে, যা জিডিপি’র প্রায় ৪.৬ শতাংশ।
* ঘাটতি মেটানোর জন্য অর্ধেকের বেশি অর্থ বিদেশি উৎস থেকে এবং বাকি অংশ ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ করে মেটানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
* পরিচালন (অনুন্নয়ন) খাতে বরাদ্দ ৫ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি)-র লক্ষ্য ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
কার জন্য কী থাকছে? (কিছু সম্ভাব্য পরিবর্তন)
বাজেটে কিছু পণ্যের কর-শুল্ক কমতে বা বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলবে। সম্ভাব্য কিছু পরিবর্তন নিচে দেওয়া হলো:
▪️ মুঠোফোন ব্যবহারকারী: মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, এতে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের খরচ বাড়বে। ই-সিম তোলার খরচও বাড়বে।
▪️ চিকিৎসা সেবা: বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা যন্ত্র ও সরঞ্জাম আমদানির ক্ষেত্রে শুল্কছাড় কমানো হতে পারে, ফলে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
▪️ বিনোদন সেবা: অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ও থিম পার্কে ভ্যাট দ্বিগুণ (১৫ শতাংশ) করা হতে পারে, যা বিনোদনের খরচ বাড়াবে।
▪️ ব্যক্তিগত করদাতা: ব্যক্তির ক্ষেত্রে ন্যূনতম কর কিছুটা কমতে পারে এবং জমি কেনাবেচায় কর কমানো হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন দাখিলের বাধ্যবাধকতা তুলে নেওয়া হতে পারে।
▪️ ব্যবসায়ী: পুঁজিবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে কর্পোরেট করহার বাড়তে পারে। তবে, এলএনজি আমদানি ও ওষুধের কাঁচামালে শুল্ক ছাড়ের পরিকল্পনা রয়েছে।
▪️ কালো টাকা সাদা করার সুযোগ: এবারের বাজেটেও অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকছে।
▪️ ভর্তুকি: ভর্তুকির এক-তৃতীয়াংশই বিদ্যুৎ খাতে বরাদ্দ করা হতে পারে, যার বেশির ভাগ ক্যাপাসিটি চার্জে যাবে।
এবারের বাজেট দেশের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এবং ভবিষ্যতে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে কতটা সহায়ক হবে, তা এখন দেখার বিষয়। বাজেট পাসের পর এর পূর্ণাঙ্গ প্রভাব বোঝা যাবে।