এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে আদেশ জারি
- আপডেট সময় : ০৫:৪২:১৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫ ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে আদেশ জারি- শিক্ষক নেতৃবৃন্দের প্রত্যাখ্যান।
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন দুই হাজার টাকা হারে বাড়িভাড়া নির্ধারণ করে আদেশ জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
পাঁচ শতাংশ বাড়িভাড়া দেওয়ার প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) সকালে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের প্রবিধি অনুবিভাগের উপসচিব মরিয়ম মিতুর সই করা প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারের বিদ্যমান বাজেটের সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় নিয়ে বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ভাতা মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে (সর্বনিম্ন ২০০০ টাকা) করা হলো। এ আদেশ নভেম্বর মাস থেকে কার্যকর হবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের ২০ শতাংশ (সর্বনিম্ন ৩ হাজার টাকা) বাড়ি ভাড়াসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। তাঁরা ৫ শতাংশ বাড়ি ভাড়া দেওয়ার প্রস্তাব আগেই প্রত্যাখ্যান করেছেন।

প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকদের এ বাড়িভাড়া প্রদানে কিছু শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। সেগুলো হলো-
১. উক্ত বাড়িভাড়া ভাতা পরবর্তীতে জাতীয় বেতনস্কেল অনুযায়ী সমন্বয় করতে হবে।
২. ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ) শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা-২০২১’, ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (মাদরাসা) শিক্ষক-কর্মচারী এমপিও নীতিমালা ২০১৮ (২৩ নভেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সংশোধিত)’ এবং ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (ভোকেশনাল, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি ডিপ্লোমা ও মৎস্য ডিপ্লোমা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০১৮ সরকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে জারিকৃত এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন, আদেশ, পরিপত্র, নীতিমালা অনুসরণপূর্বক নিয়োগের শর্ত পালন করতে হবে।
৩. ভাতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীরা কোনো বকেয়া প্রাপ্য হবেন না।
৪. ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে সকল আর্থিক বিধি-বিধান অবশ্যই পালন করতে হবে।
৫. এ ভাতা সংক্রান্ত ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ অনিয়মের জন্য দায়ী থাকবেন।
বাড়িভাড়া ভাতা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন এমপিওভক্ত শিক্ষকরা। গত আগস্ট মাসে তারা ঢাকায় মহাসমাবেশ করে মূল বেতনের ওপর শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা দেওয়ার দাবি তোলেন।
কিন্তু শিক্ষকদের দাবি উপেক্ষা করে গত ৩০ সেপ্টেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে বাড়িভাড়া মাত্র ৫০০ টাকা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। ৫ অক্টোবর শিক্ষক দিবসে সে প্রজ্ঞাপন সামনে এলে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ওই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষকরা।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক করমচারিরা বাড়িভাড়া ২০ শতাংশ হারে দেওয়াসহ তিন দফা দাবিতে গত ১২ অক্টোবর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন শিক্ষকরা। পরে বিকেলে তারা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। এরপর থেকে সেখানে অবস্থান নিয়েই বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন।
এবার শিক্ষকরা শিক্ষা ভবন অভিমুখে ‘ভূখা মিছিল’ কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছেন। কর্মসূচির অংশ হিসেবে তারা খালি থালা ও প্লেট হাতে নিয়ে মিছিল করবেন।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী বলেন, শিক্ষক হিসেবে আমাদের জীবনে এমন এক অবস্থায় এসেছে, যেখানে ‘খালি থালা হাতে’ রাস্তায় নামা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ‘ভূখা মিছিল’ কর্মসূচি শুধু প্রতীকী প্রতিবাদ নয়, এটা আমাদের অন্তরের কান্না-বঞ্চনা ও অসম্মানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা।
সরকার চাইলে আজই এ সংকটের অবসান ঘটাতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের প্রতি বিনীত আবেদন আমাদের আর অনিশ্চয়তার মধ্যে রাখবেন না। শিক্ষক সমাজ মর্যাদা চায়, করুণা নয়। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চললেও সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি আনুযায়ী কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি। তাই ক্ষোভ ও প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতেই এ ভূখা মিছিল কর্মসূচি করা হবে।
একই সঙ্গে সারাদেশের প্রায় ৩০ হাজার এমপিভুক্ত স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টানা কর্মবিরতি চলছে। গত ১৩ অক্টোবর থেকে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মসূচি করছেন তারা। এতে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষাসহ সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।














