শিরোনাম:
NTRCA এর নিয়োগ ও স্কুলগুলোর শূণ্যপদ।

এমরানা বেগম
- আপডেট সময় : ১০:৩৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫ ১২২ বার পড়া হয়েছে
এমরানা বেগম, কাপাসিয়া, গাজীপুর।
NTRCA এর নিয়োগ ও স্কুলগুলোর শূণ্যপদ।
বিগত ২০১৫ সাল থেকে NTRCA বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে। যার ফলে বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নিয়োগ সংক্রান্ত স্বচ্ছতা ফিরে আসছে। বিশেষ করে স্বজনপ্রীতি কিংবা অসদুপায়ে বিদ্যালয কমিটি কিংবা প্রধান শিক্ষক ইচ্ছা করলেই অযোগ্য কাউকে নিয়োগ দিতে পারছেনা। সরকারের এই যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো NTRCA এর নিয়োগ কার্যক্রম এতটাই দীর্ঘসূত্রিতা যে বছরের পর বছর দেশের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে সৃষ্ট শূণ্যপদ গুলো পূরণ হয়নি। যার ফলে শিক্ষক সংকট এতটাই বেড়েছে যে অনেক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে। যতটা না স্বস্তিতে ছিলাম যে নিয়োগ প্রক্রিয়া হাতে না থাকলে দুর্নীতি থেকে রক্ষা পাবে, তার চেয়ে শতোধিক সংকটে পড়েছে শিক্ষক স্বলপতার কারণে।
এরকম হাজারো প্রতিষ্ঠান আছে বিগত ৫/৭ বছর কোন শিক্ষকই পায়নি বার বার শূণ্যপদের চাহিদা দেওয়া সত্ত্বেও। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অর্থাৎ প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠান গুলো যেখানে স্বল্পআয়ের দিনমজুর কিংবা দারিদ্র্যসীমার নিচে যাদের বসবাস তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য ন্যূনতম খরচ যোগানোই কঠিন! সেখানকার স্কুলগুলোতে খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করা সম্ভব হয়ে উঠেনা। ফলে বছরের পর বছর শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় অভিভাবকগন তাদের সন্তানদের আশেপাশের ব্যাঙের ছাতার মতো বেড়ে উঠা কিন্ডারগার্টেন এ ভর্তি করে। যেখানে না আছে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষিত শিক্ষক না আছে সরকারি নিয়মনীতি মানার প্রবণতা। নিজেদের ইচ্ছেমতো গাইডলাইন দিয়ে কোমলমতি শিশুদের দিন দিন গিনিপিগ তৈরি করছে, ২/১ টা ব্যাতিক্রম ছাড়া। আর এদিকে একসময়ের ভালো ফলাফল করা প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের শিক্ষার মান ধরে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলে কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে যে খণ্ডকালীন শিক্ষক রেখে পাঠদান করাবে! যেখানে শিক্ষার্থীরা ১০০/২০০ টাকা বেতন দিয়ে পড়তে পারেনা।
প্রতিবছর NTRCA থেকে অসংখ্য চাকরি প্রত্যাশী অপেক্ষায় থাকে নিয়োগপ্রাপ্তির জন্য কিন্তু বছর বছর অপেক্ষায় থেকে হয়তো অনেকের চাকরির বয়সই চলে যায়! শুধু তাই, নিয়োগ সক্রান্ত নানা রকম জটিলতায় চলে যায় আরও মূল্যবান সময়। যার ফলশ্রুতিতে ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে হিমসিম খাচ্ছে। গ্রামের একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে – “বড় করে পাত পেতে বসে থাকলে কি হবে? খাবারই যদি না থাকে!”
নিয়োগ প্রক্রিয়া সরকারের হাতে নেওয়ার পর যে আশা করেছিলাম সে আশা পূরণ করতে পেরেছে কি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ!
তাছাড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি সেটি হলো, মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আসার কোন আগ্রহ নাই! একজন অনার্স – মাস্টার্স পাশ করা মেধাবি কেন এই স্বল্পবেতনে চাকরি করতে আসবে! অনেক আন্দোলন, প্রতিবাদ, লেখালেখি এমন কোন প্রক্রিয়া বাকি নেই যে শিক্ষকরা করছেনা! এখনো পর্যন্ত কোন নীতিনির্ধারকদের নজরে আসছে কি?
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড! এই প্রবাদটিকে আমরা সেই শিশু কাল থেকে শিখে আসছি! অথচ মেরুদণ্ড সোঁজা রাখতে যা যা প্রয়োজনীয় সেদিকে কারোরই নজর নেই।
সুতরাং শুধুমাত্র শিক্ষা ব্যবস্থাই একটা জাতিকে উন্নতি কিংবা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিতে পারে!
বিষয়টি ভাবার সময় হয়েছে কি…?
এমরানা বেগম, সহকারী প্রধান শিক্ষক
আমরাইদ ইয়াকুব আলী সিকদার উচ্চ বিদ্যালয়
কাপাসিয়া, গাজীপুর।
তারিখ : ২৫.০৭.২০২৫