এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি বুধবারের মধ্যে না মানলে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যমুনা অভিমুখে লংমার্চ
- আপডেট সময় : ০২:২৮:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ১৫৫ বার পড়া হয়েছে
এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি বুধবারের মধ্যে না মানলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যমুনা অভিমুখে লংমার্চ।
বাড়িভাড়া ভাতাসহ তিন দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে টানা চতুর্থ দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষকরা। পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী দাবি আদায়ে সরকার থেকে কোন সাড়া না পাওয়ায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ ব্লকেড করতে যাত্রা শুরু করেছে শিক্ষকরা।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটের দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শাহবাগ অভিমুখে যাত্রা শুরু করে শিক্ষকরা৷
এসময় ‘দাবি মোদের যৌক্তিক, ২০ পার্সেন্ট বাড়িভাড়া চাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন শিক্ষকরা।
এর আগে দুপুরে জাতীয় শহীদ মিনারে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেছেন, বাড়িভাড়া ২০ শতাংশের একটুও কম হবে না। চিকিৎসা ভাতা ১ হাজার ৪৯৯ টাকা হলেও হবে না, ১৫০০ টাকা করতে হবে। আর কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশই দিতে হবে। না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা আজ ১৫ অক্টোবর বুধবারের মধ্যে দাবি না মানলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় যমুনা অভিমুখে লংমার্চ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়ার সময় এ ঘোষণা দেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি বলেন, আজকের মধ্যে যদি আমাদের দাবি মেনে না নেওয়া হয় তাহলে আমরা আগামীকাল দুপুর ১২টায় লংমার্চ টু যমুনা কর্মসূচি পালন করবো। প্রশাসনকে বলবো, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করেছি, আপনারাও আমাদের সহযোগিতা করুন।
অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন আজিজী আরও বলেন, আগামীকাল দাখিল পরীক্ষা আছে। আমাদের দাবি না মানা হলে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা কিছুই চলবে না।

সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। আজকের কর্মসূচি সেই দাবিগুলোরই অংশ।
একজন আন্দোলনকারী শিক্ষক বললেন, আমরা ক্লাসরুমে নীরব থেকেও দেশের ভবিষ্যৎ তৈরি করি। অথচ নিজেদের ন্যায্য অধিকার পেতে আজ আমাদের রাস্তায় আসতে হয়েছে-এটাই সবচেয়ে কষ্টের।

শিক্ষকদের ব্লকেডে শাহবাগ হয়ে রমনা, এলিফ্যান্ট রোড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় যানচলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। যানজটে আটকে থাকা লোকজন কেউ বিরক্ত, কেউ আবার দাঁড়িয়ে দেখছেন ব্যানার হাতে স্লোগান দেওয়া শিক্ষকদের দৃঢ় মুখগুলো।
পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থানে। বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল ও জলকামানও মোতায়েন করা হয় যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য।
তবে আন্দোলনকারীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এবং পুলিশের সঙ্গে তাৎক্ষণিক কোনো সংঘাতের খবর পাওয়া যায়নি।
এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকুক। শিক্ষকদের দাবির বিষয় সরকার দেখবে, আমরা শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করছি।
রোদে পুড়ে, ধুলোয় ঢাকা ক্লান্ত মুখগুলোতেও আছে স্পষ্ট প্রতিজ্ঞা, আমরা কথা না শোনা পর্যন্ত রাস্তায় থাকব। কেউ স্লোগান দিচ্ছেন, কেউ চুপচাপ বসে আছেন ব্যানার হাতে। শিক্ষক সমাজের আন্দোলন কোনো একক শ্রেণির প্রতিবাদ নয়; এটি শিক্ষাব্যবস্থার সার্বিক সংকটের প্রতিফলন। পাঠদান যখন পেশার চেয়ে দায়বদ্ধতা, তখন সেই পেশাজীবীরা যখন রাস্তায় নামেন, সেটি এক গভীর বার্তা বহন করে, শিক্ষাব্যবস্থা যদি টিকে থাকতে চায়, তবে শিক্ষকদের ন্যায্য প্রাপ্য নিশ্চিত করতেই হবে।

সূর্য ঢলে পড়েছে, তবুও শাহবাগের বাতাসে স্লোগানের প্রতিধ্বনি। পুলিশ এখনো সতর্ক, শিক্ষকরাও অবস্থান ধরে রেখেছেন। কেউ বলেন, এই আন্দোলন কেবল বেতন বা সুবিধার নয়; এটি মর্যাদা ও স্বীকৃতির লড়াই। আজকের শাহবাগ যেন সেই লড়াইয়ের প্রতীক- যেখানে ব্লকেড শুধু সড়কে নয়, জমে থাকা বছরের পর বছরের অবহেলাকেও থামিয়ে দিয়েছে।














